রোবটের ইতিহাস

Published: 2021-04-20 03:15:00

 

আনুমানিক ৩২০ অব্দে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল এক বিখ্যাত উক্তি দিয়েছিলেন। উক্তিটি হল ”আমাদের হাতিয়ার গুলো যদি নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো বুঝে নিতো এবং মানানসই প্রতিটি কাজে সাহায্য করতো, তাহলে কোনো প্রভুর আর দাসের প্রয়োজন পড়তো না”। উক্তিটি শুনে মনে হতে পারে এটাতো আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেই সময় এই চিন্তাকে পাগলের প্রলাপ বলে মনে হতো। তারপর কেটে গেল এক হাজার আটশো পনেরো বছর।  ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে লিওনার্দে দ্য ভিঞ্চি সর্ব প্রথশ মনুষ্য চারিত্রিক রোবটের ছবি আঁকলেন। তারপর থেকেই বিজ্ঞানীরা নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন রোবট নিয়ে আরো বিস্তৃত গবেষনা । ১৭০০ থেকে ১৯০০ সালের মাঝে রোবট বিষয়ে মানুষের মধ্যে মৌলিক কিছু জ্ঞান ও চাহিদার সঞ্চার হয়। এরই মাঝে জ্যাকস দ্য ভ্যাকানসনের বানানো অটোনোমাস পাতিহাঁস (যেটা গলা নাড়াতো আর তাল মিলিয়ে ডানা ঝাপটাতো, এমনকি খাবার গিলতেও পারত) ।সে সময়ে হৈ চৈ পড়ে যায়।

রোবট কিন্তু যে কোনো কারখানার জন্যে অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এটা শুরু হয় মূলত ১৯১৩ সালে বিশ্ববিখ্যাত গাড়ী নিমার্ণকারী প্রতিষ্ঠান ফোর্ড এর মালিক হেনরি ফোর্ড এর হাত ধরে। তিনি সর্বপথম তার কারখানায় যন্ত্রাংশ টানাটানির জন্য কনভেয়ার বেল্ট বেজড অ্যাসেম্বলি লাইন ইন্সটল করেন। এটি একটি মডেল মাত্র ৯৩ মিনিটে জড়ো করতে পারত। তারপর ১৯৫৪ সালে জর্জ ডেভল ও জো এংলিবারগার মিলে সর্বপ্রথম প্রোগ্রামিক রোবট আর্ম ডিজাইন করেন। এটি ছিল রোবট বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম বিশেষ অর্জন। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ”স্পুটনিক” (প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ) চালু করেন। শুরু হল রোবোটিক স্পেস প্রতিযোগিতা। ১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণের জন্য নীল আর্মস্ট্রং কম্পিউটার অপারেটেড স্পেস প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। যেটি ছিল একধরনের রোবট।

বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন রাইটার আইজ্যঅক আসিমভ রোবটের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছিলেন –

  • রোবট কখনো আঘাত অনুভব কররে না বা আঘাত পাবে না।
  • কমান্ডদ্বারা যে কোন সিদ্ধান্ত রোবটকে মানতে হবে।
  • রোবটকে অস্তিত্ব রক্ষা করতে হব নিজের যোগ্যতায়। এরপরের সময়গুলো রোবট আবিষ্কারের স্বর্ণযুগ বলা চলে।

১৯৯৪ সালে কার্ণেগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আট পায়ের হাটা রোবট ডান্তে-২ তৈরি করা হয় যা সফলতার সাথে আগ্নেয়গিরির গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করতে ব্যবহার করা হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে বিশ্ব বিখ্যাত” রোবোকাপ” টুর্নামেন্ট জাপানে আয়োজন করা হয়। ১৯৯৯ সালের দিকে বিভিন্ন রোবোট ব্র্যান্ড বাজারে আসে।

গৃহস্থালির কাজ, আপ্যায়ন করা, পড়াশোনা করানো. দাবা খেলা ইত্যাদি রোবট আস্তে আস্তে বাণিজ্যিকভাবে বাজার জাত করা শুরু হয়। ২০০৪ সালে ইপসম ৭ সেমি উচ্চতা আর মাত্র ১০ গ্রাম ওজনের সবচেয়ে ছোট রোবট বাজারে ছাড়ে। এই বিশেষ ধরনের হেলিকপ্টার রোবট একটি উড়ন্ত ক্যামেরায় দুর্যোগকালীন যে কোন ভিডিও বার্তা পাঠাতে সক্ষম।আমরা অনেকেই জানি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের কথা। এটিও কিন্তু একটি রোবট।

২০০২ সালে শুরু হওয়া জনপ্রিয় রোম্বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রোবট এখন পর্যন্ত প্রায় ২.৫ মিলিয়ন এর বেশি বিক্রি হয়েছে।  বর্তমানে রোবটের নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশেও রোবটি নিয়ে বেশ গবেষণা ও কাজ চলছে। যে কেউ রোবট তৈরি করতে পারে। শুধু থাকা লাগবে প্রোগ্রামিং জ্ঞান এবং হার্ডওয়্যার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে এবং তাদের দক্ষতা দিয়ে উজ্জ্বল করে আসছে দেশের নাম।



There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in